ইতিহাস ও ঐতিহ্য • 18 Sep 2025
ফতেহজংপুর দুর্গ (Fatehjangpur Fort)
-avatar.jpg)
ফতেহজংপুর দুর্গ (Fatehjangpur Fort)
অবস্থান: শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার ফতেহজংপুর গ্রামে এই দুর্গটির ধ্বংসাবশেষ দেখতে পাওয়া যায়।
ঐতিহাসিক পটভূমি
ফতেহজংপুর দুর্গের ইতিহাস বাংলার বারো ভূঁইয়াদের সময়কার এবং মোঘলদের বাংলা বিজয়ের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
- প্রাক-মোঘল যুগ: মোঘলদের আগমনের পূর্বে এই অঞ্চলটি বিক্রমপুরের জমিদার এবং বারো ভূঁইয়াদের অন্যতম শক্তিশালী নেতা কেদার রায়ের শাসনাধীন ছিল। তখন এই এলাকাটি 'শ্রীনগর' নামে পরিচিত ছিল।
- মোঘল বিজয়: সম্রাট আকবরের সেনাপতি রাজা মানসিংহ যখন বাংলা বিজয়ের জন্য আসেন, তখন কেদার রায়ের সাথে তার এক প্রচণ্ড যুদ্ধ সংঘটিত হয়। যুদ্ধে কেদার রায় পরাজিত ও নিহত হন।
- দুর্গ নির্মাণ ও নামকরণ: মোঘলদের এই বিজয়ের স্মারক হিসেবে রাজা মানসিংহ শ্রীনগরের নাম পরিবর্তন করে "ফতেহজংপুর" রাখেন। 'ফতেহ' শব্দের অর্থ 'বিজয়' এবং 'জং' অর্থ 'যুদ্ধ' - অর্থাৎ 'যুদ্ধজয়ের নগরী'। এই বিজয়ের পর তিনি এখানে একটি শক্তিশালী সামরিক দুর্গ নির্মাণ করেন, যা ফতেহজংপুর দুর্গ নামে পরিচিতি লাভ করে। মূলত মগ ও পর্তুগিজ জলদস্যুদের আক্রমণ থেকে এই অঞ্চলকে সুরক্ষিত রাখা এবং নিজেদের শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত করাই ছিল এই দুর্গ নির্মাণের প্রধান উদ্দেশ্য।
স্থাপত্য ও বর্তমান অবস্থা
একসময়কার এই শক্তিশালী দুর্গটি কালের বিবর্তনে এখন প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। আপনার তোলা ছবিটি দুর্গটির বর্তমান অবস্থাকেই তুলে ধরেছে।
- এর দেয়ালগুলো চুন-সুরকি দিয়ে তৈরি মোটা ইটের গাঁথুনিতে গড়া।
- দুর্গের অধিকাংশ এলাকাই এখন গাছপালা ও জঙ্গলে আবৃত হয়ে পড়েছে। কিছু দেয়াল এবং কাঠামোর অংশবিশেষ এখনো টিকে আছে, যা এর অতীত গৌরবের সাক্ষী বহন করে।
- পদ্মা নদীর নিকটবর্তী হওয়ায় নদী ভাঙনের ফলেও দুর্গটির অনেক অংশ বিলীন হয়ে গেছে বলে ধারণা করা হয়।
গুরুত্ব
ফতেহজংপুর দুর্গ শরীয়তপুর জেলার অন্যতম প্রাচীন এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। এটি মোঘলদের বাংলা বিজয় এবং তৎকালীন সামরিক কৌশলের এক নীরব সাক্ষী। সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ ও গবেষণার মাধ্যমে এই স্থানটি থেকে বাংলার ইতিহাসের অনেক অজানা তথ্য উন্মোচিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
যাতায়াত
শরীয়তপুর জেলা সদর থেকে বাসে করে নড়িয়া উপজেলায় আসতে হবে। নড়িয়া বাজার থেকে রিকশা বা অটোরিকশাযোগে সহজেই ফতেহজংপুর গ্রামে অবস্থিত এই দুর্গের ধ্বংসাবশেষে পৌঁছানো যায়।
উপজিলা:
Naria
ফিরে ইতিহাস ও ঐতিহ্য
মন্তব্য (0)
এখনও কোন মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!